বাড়াদী ইউনিয়নে বেশ কিছু এনজিও কাজ করে। এই সংস্থা গুলো বাড়াদী ইউনিয়নের বিভিন্ন মানুষকে আর্থিক সহায়তা জন্য ঋণ দান করে ।
১। আশা -
২।গ্রামীন ব্যাংক,
৩।ব্রাক- মোবাইল নং- ০১৭২৮৪৫১৯১৩
৪।ওয়েভ ফাউন্ডেশন, মোবাইল নং- ০১৯৬৭৩৫৬৯৮১
৫।জনকল্যাণ
৬।জাগরণী চক্র
৭। আত্নবিশ্বাস- মোবাইল নং- ০১৭৩৭৮১৩৬১৩
৮। ফেম- মোবাইল নং- ০১৭৫১৮৭৭১ ৬৭
৯। একতা
১০। আর.আর.এফ।
ব্র্যাক আজ উন্নয়নজগতে একটি সাফল্যের নাম। বাংলাদেশের এই সংস্থাটি উন্নয়নক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসূত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অপর দশটি দেশে কর্মসূচি বাস্থয়িত করছে এবং দরিদ্র মানুষের সম্ভাবনার বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রত্যন- গ্রামাঞ্চলে স্বল্পপরিসরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কার্যক্রমের সূচনা ঘটালেও, ব্র্যাক বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভৌত ও মানবিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সংগঠিত করে তাদের জীবনে ব্র্যাক স্থায়িত্বশীল পরিবর্তন নিয়ে আসছে। তাদের জন্য এমন একটি পরিপার্শ্ব গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে দরিদ্র মানুষ তাদের নিজস্ব জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। উন্নয়নের সামগ্রিক কর্মকৌশলে ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা, জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সকলকে অন-র্ভুক্ত করার ফলেই আমাদের পক্ষে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। ব্র্যাকের কর্মিদল এবং এই সংস্থার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাখো উদ্যেক্তাকে নিয়ে ব্র্যাকের কর্মধারা বর্তমানে ১২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে যাচ্ছে এবং এশিয়া, আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দশটি দেশ ও বর্তমানে একাদশ দেশ হিসেবে ফিলিপাইনে কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে আমাদের কাজ বৈশ্বিক আন্দোলনরূপে মানুষের জীবনে প্রত্যাশিত পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
অতিদরিদ্রকর্মসূচি
ব্র্যাকের অতিদরিদ্র কর্মসূচি নামে একটি বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে। অর্থনৈতিক পিরামিডের ভিত্তি স্তরে বাস করে যারা, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অতিদরিদ্র কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিজেদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে ও এইজন গোষ্ঠীকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ক্ষুদ্রঋণ ও মূলস্রোতের অন্যান্য দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় আসতে তারা সক্ষম হয় না। এই জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধাপ অতিক্রমে সহায়তা করার লক্ষে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদ হসত্মান্তর, কর্ম দক্ষতার উন্নয়ন এবং বিশেষ স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা। সর্বসাম্প্রতিক এক গুরুত্ব মূল্যায়ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক র্মসূচির প্রায় ৯৫ শতাংশ সদস্য অতিদারিদ্র্যের আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে এবং কর্মসূচির প্রথম ছয় বছরে এই ইতিবাচক পরিবর্তন গুলো পরিলক্ষিত হয়েছে। উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ ইক্ষুদ্রঋণ তথা মূলস্রোতেরসে বা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ব্র্যাক আফগানি সত্মান এবং ব্র্যাক পাকিসত্মানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মাইক্রোফাইন্যান্স
উদ্ভাবনশীল, টেকসই এবং জনগোষ্ঠী কেন্দ্রিক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি ব্র্যাকের সামগ্রিক কর্মকৌশল অনুসরণ করে প্রান্তিক মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করছে। গত চার দশকের অভিযাত্রায় এই কর্মসূচি দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা এবং জীবন মানব উন্নয়নের উপকরণ জুগিয়ে এক্ষেত্রে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবাদানকারী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সহায়তা নিয়ে তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই কর্মসূচির সদস্য সংখ্যা ৭.৭৮ মিলিয়ন এবং ৬৪টি জেলায় বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬৯৩.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিসত্মান, পাকিসত্মান, শ্রীলঙ্কা, সিয়েরালিওন, দক্ষিণসুদান, উগান্ডা, লাইবেরিয়া এবং তানজানিয়ায় ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দারিদ্র্যের বহুমুখিতা বিবেচনা করে দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশলে সেবা প্রদান করে থাকে। সেবা সমূহ হল:
ব্র্যাকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি আরও যেসব সেবা প্রদান করে থাকে, সেগুলো হল:
ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সদস্যদের মানবিক ও আইনি শিক্ষা প্রদান করে যাতে আইনগত দিক থেকে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটে।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন এবং কর্মসূচি-সহায়ক বিভিন্ন উদ্যোগ
ব্র্যাক ২০১১ সালে কৌশলগত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বাধিক প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (আইডিপি) তথা সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যথা হাওর ও চরাঞ্চলে বসবাসকারী এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা উন্নয়ন উদ্যোগের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, তাদের দারিদ্র্য ও বিপন্নতা হ্রাসকল্পে আইডিপি কাজ করে চলেছে।
ব্র্যাকের মৌলিক সেবা, উন্নত জীবিকার সুযোগ, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ও ক্ষমতায়ন, গবেষণা, জ্ঞান ও তথ্যভা-ার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে একীভূত ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আইডিপি কাজ করে। নোয়াখালির ভাটি অঞ্চলের চর এলাকায় চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রোজেক্ট (সিডিএসপি-৪), নওগাঁও, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের সমতল অঞ্চলের আদিবাসী এবং হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট পরিচালিত হচ্ছে।
ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত এবং সমাজের প্রান্তবাসী মানুষের কাছে প্রতিরোধমূলক, প্রচারমূলক, প্রতিকারমূলক ও পুনর্বাসনমূলক সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সহায়তামূলক পরিবেশ তৈরি জরুরি বলে স্বাস্থ্য কর্মসূচি বিবেচনা করে। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কার্যক্রমে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন স্বাস্থ্যসেবিকারা। গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা ব্র্যাক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবিকারা কাজ করেন। তারা তাদের এলাকায় দরিদ্র লোকদের দোরগোড়ায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ও সামগ্রী পৌঁছে দেন। ব্র্যাক কর্তৃক প্রশিক্ষিত এই স্বাস্থ্যসেবিকারা দেশের বার কোটি মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এভাবে তারা দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করে দিচ্ছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বহুবিধ উদ্যোগের প্রবর্তন করা হয়েছে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য-উদ্যোগ সাধারণ জনগণের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিশিক্ষা, ছোঁয়াচে ও অছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ ও সাধারণ জীবনমান উন্নয়ন। বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় স্বাস্থ্য এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি সরকার ও অন্যান্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ, আফগানিসত্মান, পাকিসত্মান, উগান্ডা, দক্ষিণ সুদান এবং ফিলিপাইন-এই ছয়টি দেশে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী সাত লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
ব্র্যাকের কার্যকর এবং সাশ্রয়ী মডেলের স্কুলগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে-পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। ব্র্যাকস্কুলগুলো নতুন ধরনের শিক্ষাদানপদ্ধতি ও উপকরণ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূরক হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ শিশুকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসছে, যাদের বেশিরভাগই অতিদারিদ্র্য, সংঘাত, বঞ্চনা ও উচ্ছেদের শিকার। যেসব এলাকা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় জলমগ্ন থাকে, সেখানকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে ব্র্যাক নৌকা স্কুল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচি সুবিধাবঞ্চিত ঘরের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাদান করে মূলধারার স্কুলের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। বিশেষায়িত স্কুলের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিশুদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্কুলে সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রয়োজনভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো হচ্ছে: দক্ষতা বৃদ্ধি, সহপাঠক্রমিক ও দলগত কাজে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে মেন্টরিং উদ্যোগের বাস্তবায়ন এবং এর মাধ্যমে ক্লাসে উপস্থিতি বাড়ানো ও ঝরে পড়া রোধ। মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ই-লার্নিং পদ্ধতির প্রচলন করার ফলে বোর্ড পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি মেধাবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে যার মাধ্যমে মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে দেশে এবং দেশের বাইরে পড়ালেখা করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে।
কিশোর ও তরুণবয়সীদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ প্রদান করে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি বিশেষ কার্যক্রমের প্রচলন করেছে। এর মাধ্যমে তাদেরকে জীবনদক্ষতা, জীবিকা এবং কর্মদক্ষতার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মৌলিক আর্থিক শিক্ষা ও আর্থিক সেবার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ব্র্যাকের কিশোরকিশোরী ক্লাবের সদস্যরা একটি নিরাপদ পরিবেশে সমবয়সীদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে তাদের চরিত্র গঠন ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পায়। এই ক্লাবগুলো কিশোরী মেয়েদের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে সহায়তা করে। আমাদের বহুমুখি গণকেন্দ্র পাঠাগারগুলোর মোবাইল লাইব্রেরি বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলছে এবং একইসঙ্গে গ্রামীণ যুববয়সীদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস